শবে বারাআতে কী আমল করবো : শবে বারাআতের রোযার সাথে মিলিয়েশা'বান মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে আইয়্যামে বীজের রোযা রাখা উত্তম
----------------------------------------------------------------------
মুফতী আবুল হাসান শামসাবাদী
----------------------------------------------------------------------
.
আরবী মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখকে (চাঁদের পূর্ণতার ভিত্তিতে) "আইয়্যামে বীজ" (আলোকোজ্জ্বল দিনসমূহ) বলা হয় এবং প্রত্যেক আরবী মাসের এ দিনসমূহের রোযাকে “আইয়্যামে বীজ-এর নফল রোযা” বলে। এ ৩টি রোযা রাখার ফজীলত হলো, এর ছাওয়াব ১ মাস রোযা রাখার সমতূল্য। এভাবে প্রতিমাসে ৩দিন করে রোযা রাখলে ১২ মাসে পূর্ণ ১ বছরের রোযার ছাওয়াব হবে। এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে--
عَنْ ابْنِ مِلْحَانَ الْقَيْسِيِّ عَنْ أَبِيهِ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُنَا أَنْ نَصُومَ الْبِيضَ ثَلَاثَ عَشْرَةَ وَأَرْبَعَ عَشْرَةَ وَخَمْسَ عَشْرَةَ قَالَ وَقَالَ هُنَّ كَهَيْئَةِ الدَّهْرِ
হযরত ইবনে মিলজান ক্বাইসী (রা.) স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে আইয়্যামে বীজ ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখার নির্দেশ দিতেন এবং তিনি বলেন, এ দিনগুলোর রোযা এক বছরের রোযার সমতুল্য।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২৪৪৯)
চলতি ২০২০ সনে শবে বারআত হচ্ছে ৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত। আর আইয়্যামে বীজ তথা ১৩, ১৪ ও ১৫ শা‘বান হচ্ছে ৮, ৯ ও ১০ এপ্রিল রোজ বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার। তাই মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সাহরী খেয়ে পরদিন থেকে শুরু করে এ রোযাগুলো রাখা যায়। শুধু শবে বারাআতের পরদিন (১৫ শা‘বান) রোযা রাখা সম্পর্কে যে হাদীস বর্ণিত হয়েছে, তা জয়ীফ বিধায় সেই দিনের সাথে মিলিয়ে আইয়্যামে বীজ-এর ৩দিন রোযা রাখাই উত্তম হবে।
আর শবে বারাআতের আমল হিসেবে নফল নামায, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির, ইসতিগফার প্রভৃতি আমল করা যায়। তবে এ আমল ব্যক্তিগতভাবে যার যার বাড়ীতে নির্জনে করতে হবে। শবে বারাআতে মসজিদে গিয়ে বা দলবদ্ধ হয়ে জাকজমকপূর্ণভাবে আমল করা ঠিক নয়। এভাবে
ইনফিরাদীরূপে এ রাতে সাধ্যমতো নফল ইবাদত-বন্দেগী করে শেষ রাতে সাহরী খেয়ে পরের দিন রোযা রাখা যায় আইয়্যামে বীজের সাথে মিলিয়ে।
.
শবে বারাআতের বিষয়ে সহীহ হাদীসের ভিত্তি :
-----------------------------------------------
ইনফিরাদীরূপে এ রাতে সাধ্যমতো নফল ইবাদত-বন্দেগী করে শেষ রাতে সাহরী খেয়ে পরের দিন রোযা রাখা যায় আইয়্যামে বীজের সাথে মিলিয়ে।
.
শবে বারাআতের বিষয়ে সহীহ হাদীসের ভিত্তি :
-----------------------------------------------
শবে বারাআত হচ্ছে লাইলাতুন নিসফি মিন শা‘বান বা শা‘বান মাসের মধ্যতারিখের রাত। এ রাতের ফজীলত সম্পর্কে কয়েকটি সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে একটি হাদীস হলো--
عن معاذ بن جبل عن النبي صلى الله عليه وسلم قال : يطلع الله إلى خلقه في ليلة النصف من شعبان، فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن.
হযরত মু‘আয ইবনে জাবাল (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন--“অর্ধ-শাবানের রাতে আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। অতঃপর শিরককারী ও বিদ্বেষপোষণকারী ছাড়া তার সকল সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন।” (সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস নং ৫৬৬৫) মুহাদ্দিসগণ এ হাদীসকে সহীহ বলেছেন।
عن معاذ بن جبل عن النبي صلى الله عليه وسلم قال : يطلع الله إلى خلقه في ليلة النصف من شعبان، فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن.
হযরত মু‘আয ইবনে জাবাল (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন--“অর্ধ-শাবানের রাতে আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। অতঃপর শিরককারী ও বিদ্বেষপোষণকারী ছাড়া তার সকল সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন।” (সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস নং ৫৬৬৫) মুহাদ্দিসগণ এ হাদীসকে সহীহ বলেছেন।
এ ব্যাপারে আরো একাধিক হাদীস এসেছে--যেগুলোর সনদ ‘হাসান লিযাতিহী বা হাসান লিগায়রিহী।’ যথা মুসনাদে আহমদ-এর ৬৬৪২ নং হাদীস এবং মুসনাদুল বাযযার-এর ২০৪৫ হাদীস--যা হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে।
এছাড়া এ রাতের আমল সম্পর্কে ‘শুআবুল ঈমান-বাইহাক্বী’র এ হাদীসটি লক্ষণীয়--
হযরত হযরত আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামাযে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সিজদা করেন যে, আমার ধারণা হল, তিনি হয়তো ওফাতবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তখন তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন, তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়িশা! অথবা বলেছেন, হে হুমাইরা! তোমার কি এ আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান--এটা কোন্ রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন-
هذه ليلة النصف من شعبان، إن الله عز وجل يطلع على عباده في ليلة النصف من شعبان، فيغفر للمستغفرين ويرحم المسترحمين ويؤخر أهل الحقد كما هم.
“এটা হল অর্ধ-শাবানের রাত (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত)। আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তাঁর বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন। অতঃপর ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।” (শু‘আবুল ঈমান-বাইহাকী, ৩য় খণ্ড, ৩৮২ পৃষ্ঠা)
হযরত হযরত আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামাযে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সিজদা করেন যে, আমার ধারণা হল, তিনি হয়তো ওফাতবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তখন তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন, তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়িশা! অথবা বলেছেন, হে হুমাইরা! তোমার কি এ আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান--এটা কোন্ রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন-
هذه ليلة النصف من شعبان، إن الله عز وجل يطلع على عباده في ليلة النصف من شعبان، فيغفر للمستغفرين ويرحم المسترحمين ويؤخر أهل الحقد كما هم.
“এটা হল অর্ধ-শাবানের রাত (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত)। আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তাঁর বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন। অতঃপর ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।” (শু‘আবুল ঈমান-বাইহাকী, ৩য় খণ্ড, ৩৮২ পৃষ্ঠা)
ইমাম বাইহাকী (রহ.) এ হাদীসটি বর্ণনার পর এর সনদের ব্যাপারে বলেছেন--
هذا مرسل جيد
“এটা উত্তম সনদের মুরসাল হাদীস।”
هذا مرسل جيد
“এটা উত্তম সনদের মুরসাল হাদীস।”
সুতরাং কেউ যেন আন্দাজ-অনুমানে ভর করে শবে বারাআত সম্পর্কে কোন সহীহ হাদীস নেই এমন কথা না বলেন। অন্যথায় হাদীস অস্বীকার করার কারণে কী শাস্তি হতে পারে--তা চিন্তা করতে পারেন।
0 Comments